মাইক্রোসফট এক্সেল ২০১৯

মাইক্রোসফট এক্সেল ২০১৯ পরিচিতি – এক্সেল বাংলা টিউটোরিয়াল

মাইক্রোসফট এক্সেল ২০১৯ একটি শক্তিশালী স্প্রেডশীট অ্যাপ্লিকেশন। যা মাইক্রোসফট কর্পোরেশন দ্বারা ডেভেলপ করা হয়েছে। এটি ডেটা সংগঠন, বিশ্লেষণ এবং ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

১৯৮৫ সালে চালু হওয়ার পর থেকে, এক্সেল অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবসা, শিক্ষা এবং ব্যক্তিগত আর্থিক ব্যবস্থাপনায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

এই আর্টিকেলে মাইক্রোসফট এক্সেল ২০১৯ ভার্সনের পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে। যার মধ্যে এর বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার এবং মৌলিক কার্যাবলী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

মাইক্রোসফট এক্সেল এর স্টার্টিং স্ক্রিন

মাইক্রোসফট এক্সেল কি?

এমএস এক্সেল একটি স্প্রেডশীট প্রোগ্রাম যা ইউজারকে রো এবং কলামের মাধ্যমে ফর্মুলাসহ ডেটা সংগঠিত, ফরম্যাট এবং গণনা করার সুবিধা দিয়ে থাকে।

এমএস এক্সেল মাইক্রোসফট অফিস স্যুটের একটি এ্যাপ্লিকেশন। এটি উইন্ডোজ, ম্যাকওএস, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস সকল অপারেটিং সিস্টেমেই কার্যকর।

মাইক্রোসফট এক্সেলের মূল বৈশিষ্ট্যগুলি

এক্সেল বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বিভিন্ন কাজের জন্য একটি বহুমুখী টুল হিসেবে কার্যকরী। কিছু মূল বৈশিষ্ট্য হলো:

  • ওয়ার্কবুক এবং ওয়ার্কশীট: একটি ওয়ার্কবুক একটি এক্সেল ফাইল বা ডকুমেন্ট, যা এক বা একাধিক ওয়ার্কশীট (অথবা শীট) ধারণ করে। ওয়ার্কশীটগুলির সেলগুলোতে ডেটা প্রবেশ করানো হয়।
  • সেল এবং রেঞ্জ: সেল হল ওয়ার্কশীটের পৃথক বক্স যেখানে ডেটা প্রবেশ করানো হয়। একটি রেঞ্জ হল একাধিক সেলের নির্বাচন।
  • ফর্মুলা এবং ফাংশন: ফর্মুলা হলো এক্সেলে জটিল গণনা সমাধানের পদ্ধতি এবং ফাংশন হলো বিভিন্ন কাজের জন্য তৈরিকৃত ফর্মূলা যা এক্সেলের বিশাল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে।
  • চার্ট এবং গ্রাফ: ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশনের জন্য বিভিন্ন ধরণের চার্ট এবং গ্রাফ তৈরি করা।
  • পিভট টেবিল: ডেটা সার-সংক্ষেপ এবং বিশ্লেষণের জন্য একটি শক্তিশালী টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
  • ডেটা ভ্যালিডেশন: ডেটা এন্ট্রির সঠিকতা এবং সামঞ্জস্য নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • কন্ডিশনাল ফরম্যাটিং: নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে সিলেক্টকৃত সেলগুলিকে ফরম্যাট করার করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

এক্সেলের মৌলিক উপাদানসমূহ

এক্সেলে কাজ করার জন্য এর মৌলিক উপাদানগুলি সম্পর্কে অবগত হওয়া জরুরী। নিম্নে এক্সেল অ্যাপ্লিকেশনের প্রধান উপাদানগুলি সংক্ষেপে বর্ণিত হলো:

  • রিবন: এক্সেল উইন্ডোর উপরে অবস্থিত। রিবন বিভিন্ন ট্যাব ধারণ করে যার মধ্যে গ্রুপ বা প্যানেলের ভিত্তিতে বিভিন্ন কমান্ডসমূহ রয়েছে।
  • ওয়ার্কবুক: আপনার ডেটা ধারণকারী ফাইল বা ডকুমেন্ট। একটি ওয়ার্কবুকে একাধিক ওয়ার্কশীট থাকতে পারে।
  • ওয়ার্কশীট: ডাটা প্রবেশ করার জন্য রো এবং কলামের সমন্বয়ে তৈরিকৃত সেলের গ্রিড। প্রতিটি ওয়ার্কশীট ওয়ার্কবুকের নীচে একটি ট্যাব দ্বারা চিহ্নিত।
  • সেল: একটি রো এবং একটি কলামের ছেদ। প্রতিটি সেলের একটি একক এড্রেস রয়েছে, যেমন A1, B2 ইত্যাদি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
  • ফর্মুলা বার: একটিভ সেলের বিষয়বস্তু প্রদর্শন করা সহ ডেটা এন্ট্রি এবং সম্পাদনা করার সুবিধা।
  • স্ট্যাটাস বার: উইন্ডোর নীচে অবস্থিত, যা বর্তমান ওয়ার্কশীট সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে।

মাইক্রোসফট এক্সেল কিভাবে ব্যবহার করবেন?

ধাপ ১: এক্সেল চালু করা

স্টার্ট মেনু থেকে এক্সেল আইকনে ক্লিক করলে একটি স্টার্ট স্ক্রিনসহ ওয়েলকাম স্ক্রিন প্রদর্শিত হবে। এখান থেকে নতুন ওয়ার্কবুক তৈরি বা সংরক্ষিত ফাইল ওপেন করতে পারবেন।

ধাপ ২: ডেটা প্রবেশ করা

একটি সেল একটিভ করতে ঐ সেলের ওপর ক্লিক করুন। এবারে প্রয়োজনীয় ডেটা টাইপ করুন এবং কীবোর্ডের Enter চাপুন। একটিভ সেলে টেক্সট, সংখ্যা এবং তারিখ ইনপুট করা যায়।

ধাপ ৩: ফর্মুলা ব্যবহার করা

গণনা সহজ করতে ফর্মুলা ব্যবহার করা হয়। কোন সেলে ফর্মূলা লিখতে একটি সমান চিহ্ন (=) দিয়ে শুরু করুন, অতপর প্রয়োজনীয় গণনা বা ফাংশন ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, =A1+B1 (এক্ষেত্রে, সেল A1 এবং B1 এর মান যোগ করা হয়েছে।)

ধাপ ৪: চার্ট তৈরি করা

ভিজ্যুয়ালাইজ করতে প্রয়োজনীয় ডেটা রেঞ্জ নির্বাচন করুন। রিবনের Insert ট্যাবে যান এবং আপনার পছন্দের চার্ট এর ধরন নির্বাচন করুন। চার্ট তৈরি করা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন

ধাপ ৫: এন্ট্রিকৃত তথ্যসমূহ সংরক্ষণ করা

এক্সেলে ওয়ার্কবুক সংরক্ষণ করতে সবার ওপরে বায়ে অবস্থিত কুইক একসেস টুলবারে অবস্থিত সেভ আইকনে ক্লিক করুন বা কীবোর্ডের Ctrl+S চাপুন। এবারে ওয়ার্কবুকের জন্য একটি নাম এবং লোকেশন নির্বাচন করুন।

এক্সেলের ব্যবহারিক প্রয়োগ

এক্সেল বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন:

  • ব্যবসা: আর্থিক বিশ্লেষণ, বাজেটিং, পূর্বাভাস এবং ইনভেন্টরি ম্যানেজমেন্ট।
  • শিক্ষা: গ্রেড ট্র্যাকিং, সময়সূচি পরিচালনা এবং ডেটা বিশ্লেষণ।
  • ব্যক্তিগত আর্থিক: বাজেট পরিকল্পনা, খরচ ট্র্যাকিং এবং বিনিয়োগ বিশ্লেষণ।
  • ডেটা বিশ্লেষণ: পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং রিপোর্টিং।

উপসংহার

মাইক্রোসফট এক্সেল একটি বহুমুখী এবং শক্তিশালী অ্যাপ্লিকেশন। যা সহজ ডেটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে জটিল ডেটা বিশ্লেষণ পর্যন্ত কাজগুলি পরিচালনা করতে পারে।

এক্সেল এর বৈশিষ্ট্য এবং উপাদানগুলি বোঝার মাধ্যমে সহজে ডেটা সংগঠিত, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন করা যায়।

বিস্তারিত টিউটোরিয়াল এবং এডভান্সড বিষয়গুলির জন্য আমাদের সাথেই থাকুন। ইনশাআল্লাহ্, আশা করি, আপনার এক্সেল দক্ষতা বাড়াতে আমাদের ব্যাপক টিউটোরিয়াল, গাইড এবং টিপসসমূহ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।

Syed Hasimul Kabir Rana

Recent Posts

এক্সেস কুয়েরি পরিচিতি এবং উদ্দেশ্য – বেসিক টু এডভান্সড গাইড

ডেটাবেজ থেকে তথ্য খুঁজে বের করে বিশ্লেষণ করাই এক্সেস কুয়েরির মূল কাজ। কুয়েরি (Query) হলো…

2 weeks ago

ডেটা এক্সপোর্ট করা (EXCEL, CSV, PDF, TXT ও HTML ফরমেটে)

ডেটা শেয়ারিং এবং বিশ্লেষণের জন্য মাইক্রোসফট এক্সেস ২০১৯ ভার্সনসহ সকল ভার্সনেই ডেটা এক্সপোর্ট করার সুবিধা…

2 weeks ago

ডেটা ইমপোর্ট করা (এক্সেল, CSV এবং অন্যান্য সোর্স থেকে)

মাইক্রোসফট একসেস ২০১৯ ভার্সনসহ সকল ভার্সনে ডেটা ইমপোর্ট করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ডেটাবেজ নির্মাণের জন্য…

2 weeks ago

প্রাইমারি কী এবং রিলেশন সেট করা | একসেস ২০১৯

প্রাইমারি কী হলো মাইক্রোসফট একসেস ডেটাবেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই প্রাইমারি কী এবং রিলেশন সেট…

2 weeks ago

ফিল্ড এবং ডেটা টাইপ নির্ধারণ করা | একসেস ২০১৯

এমএস একসেস ২০১৯ এ একটি ডেটাবেজে টেবিল তৈরি করতে সঠিক ফিল্ড এবং ডেটা টাইপ নির্ধারণ…

2 weeks ago

টেবিল তৈরি করা: ম্যানুয়ালি বা টেমপ্লেট ব্যবহার করে

মাইক্রোসফট একসেস একটি ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট টুল। একসেসে ডেটা সংরক্ষণ এবং সংগঠিত করার জন্য টেবিল ব্যবহার…

2 weeks ago