এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন) হলো ওয়েবসাইটের র‍্যাঙ্ক বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া। SEO মূলত ৩ প্রকারঃ অন-পেইজ এসইও, অফ-পেইজ এসইও, টেকনিক্যাল এসইও

তবে কাজের ধরন, কৌশল, মার্কেটিং স্ট্রাটিজি অনুযায়ী এর প্রকারভেদ ভিন্নরকমের হয়ে থাকে। এইসব প্রকারভেদ নিয়ে এই গাইডে আলোচনা করা হয়েছে।

কাজের ধরন অনুযায়ী এসইও এর প্রকারভেদ

কাজের ধরন অনুযায়ী ৩ প্রকার।

  • অন-পেইজ এসইও
  • অফ-পেইজ এসইও
  • টেকনিক্যাল এসইও

অন-পেইজ এসইও

অন-পেজ এসইও হলো ওয়েবসাইটের ভেতরের অপটিমাইজেশন এর কাজ।

এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট এবং গঠনকে সার্চ ইঞ্জিন এবং ব্যবহারকারীদের জন্য আরও কার্যকর করা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ উপাদান

  • কিওয়ার্ড রিসার্চ (Keyword Research): অন-পেজ এসইও এর প্রধান কাজ হচ্ছে কিওয়ার্ড রিসার্চ।
  • কন্টেন্টের টাইটেল (Content Title): আকর্ষণীয় এবং এসইও-বান্ধব Title তৈরি
  • মেটা ট্যাগ এবং মেটা ডিসক্রিপশন: ওয়েবপেইজের কন্টেন্ট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
  • হেডিং (Heading): ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের জন্য সঠিক হেডিং স্ট্রাকচার ব্যবহার
  • ইউজার ফ্রেন্ডলি স্ট্রাকচার (User Friendly Structure): ব্যবহারকারীদের জন্য সহজবোধ্য ওয়েবসাইট তৈরি
  • কম্পিটিটর এনালাইসিস (Competitor Analysis): সার্চ ইঞ্জিনের প্রথম পেইজের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ

প্রধান কাজ

  • টার্গেটেড কিওয়ার্ড সঠিকভাবে ইনপুট করাঃ কন্টেন্টের বিভিন্ন অংশে টার্গেটেড কীওয়ার্ড যুক্ত করে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপ্টিমাইজ করা।
  • কন্টেন্টের রিডেবিলিটি উন্নত করাঃ সহজ এবং পরিষ্কার ভাষায় কনটেন্ট লিখতে হবে যাতে ব্যবহারকারী সহজেই এর বিষয়বস্তুও বুঝতে পারে।
  • ইন্টারনাল লিঙ্কিং অপ্টিমাইজেশনঃ কন্টেন্টের প্রাসঙ্গিক অংশে লিঙ্ক যুক্ত করে ওয়েবসাইটের এক পেইজকে অন্য পেইজের সাথে লিঙ্ক করা।
  • E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, and Trustworthiness):
    • কন্টেন্টের মানঃ তথ্যবহুল এবং মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করা যাতে ব্যবহারকারী পর্যাপ্ত তথ্য পেতে পারে।
    • অথরিটির গুরুত্বঃ উচ্চমানসম্পন্ন ব্যাকলিঙ্ক তৈরি এবং Trustable Source থেকে রেফারেন্স সংগ্রহ করা।
    • ট্রাস্ট তৈরির উপায়ঃ ব্যবহারকারীদের রিভিউ, এবং নিরাপদ ওয়েবসাইট নিশ্চিত করা।
  • মেটা ট্যাগ এবং মেটা ডিসক্রিপশন অপ্টিমাইজেশনঃ কন্টেন্টের প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড এর সাথে মিল রেখে মেটা টাইটেল এবং মেটা ডেসক্রিপশন দিতে হবে।
  • হেডিং ট্যাগ ব্যবহারে ফোকাসঃ কন্টেন্টে সঠিকভাবে হেডিং ট্যাগ (h1, h2, h3,…..) ব্যবহার করতে হবে।
  • ইউআরএল স্ট্রাকচার অপ্টিমাইজেশনঃ কন্টেন্টের টাইটেল এর সাথে মিল রেখে সুন্দর এবং সহজ ইউআরএল ব্যবহার করতে হবে।
  • ইমেজ অপ্টিমাইজেশনঃ ইমেজ বা ভিডিওর সাইজ কমিয়ে ও কোয়ালিটি বজায় রাখতে হবে এবং সঠিক ফরম্যাট ও Alt Text ব্যবহার করতে হবে।
  • পেজ লোডিং স্পিড অপ্টিমাইজেশনঃ পেজের লোডিং স্পিড বাড়াতে হবে।

অফ-পেইজ এসইও

অফ-পেইজ এসইও ওয়েবসাইটের বাহিরে করা কার্যক্রম নিয়ে কাজ করে যা ভিজিবিলিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

যেমন: ব্যাকলিঙ্ক (Do Follow Link*, No Follow Link) তৈরি, সোশ্যাল সিগন্যাল (Social Signal), Citation, এবং ব্র্যান্ড মেনশন।

এসইও এর এই অংশে ব্যাকলিঙ্ক বিল্ডআপ করা ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্কিং এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ফোকাস এরিয়া

  • উচ্চমানের ব্যাকলিঙ্ক (Do Follow Link) তৈরিঃ উচ্চমানের এবং ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট থেকে ব্যাকলিঙ্ক আনতে হবে।
  • সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার এবং নেটওয়ার্ক বিল্ডিংঃ কন্টেন্ট বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার এবং নেটওয়ার্ক বিল্ডিং এর মাধ্যমে রেফারেল সংগ্রহ করতে হবে।
  • গেস্ট পোস্টিং এবং ইন্ডাস্ট্রি রিলেশন্সঃ গেস্ট পোস্টিং এর ক্ষেত্রে মানসম্মত কন্টেন্ট লিখতে হবে এবং এর মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি রিলেশন্স বিল্ড করতে হবে।

টেকনিক্যাল এসইও

এটি ওয়েবসাইটের টেকনিক্যাল দিক নিয়ে কাজ করে। যেমনঃ সাইটের লোডিং স্পিড, মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন, HTTPS প্রোটোকল ব্যবহার, XML সাইটম্যাপ তৈরি, Robots.txt ফাইল তৈরি ইত্যাদি।

  • সাইটের লোডিং স্পিড: ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বাড়াতে সাহায্য করে ফলে সহজেই ওয়েবসাইট র‍্যাংক করে।
  • মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন: ওয়েবসাইটের ডিজাইন অবশ্যই মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে, তা না হলে এটি নেতিবাচক প্রভাব (Bad Impact) ফেলবে।
  • HTTPS প্রোটোকল ব্যবহার: ওয়েবসাইটের জন্য অবশ্যই HTTPS (Hypertext Transfer Protocol Secure) ব্যবহার করতে হবে কারণ এটি ওয়েবসাইটের সিকিউরিটি বৃদ্ধি করে, অর্থাৎ কোনো তথ্য চুরি হওয়া থেকে রোধ করে।
  • XML সাইটম্যাপ এবং Robots.txt ফাইল: ওয়েবসাইটের সাইটম্যাপ (Site Map) তৈরি করা থাকলে গুগলের কাছে ওয়েবসাইটের Structure বুঝতে সহজ হয়, ফলে তাড়াতাড়ি Rank করে।

কাজ করার কৌশল অনুযায়ী এসইও এর প্রকারভেদ

হোয়াইট হ্যাট এসইও

SEO-এর জন্য গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন যেসব অ্যালগরিদম, নিয়ম এবং নির্দেশনা দিয়েছে, সেই নিয়ম এবং নির্দেশনা অনুযায়ী SEO করাকে White Hat SEO বলা হয়।

এতে গুগলে (Google)-এ বা সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইট খুব দ্রুত র‍্যাঙ্ক (Rank) হয় এবং অর্গানিকভাবে ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

এক কথায়, গুগলের স্ট্র্যাটেজি (Google Strategy) ফলো করাই হলো হোয়াইট হ্যাট এসইও (White Hat SEO)

ব্ল্যাকহ্যাট এসইও

Black Hat শব্দটি শুনেই যে শব্দটি মাথায় আসে তা হলো বেআইনিভাবে কোন কিছুর এক্সেস নেয়া।

Black Hat SEO-এর ক্ষেত্রেও একই বিষয় অর্থাৎ গুগলের বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদম বা নির্দেশনা ভঙ্গ করে বেআইনিভাবে ওয়েবসাইটকে র‍্যাঙ্ক করাতে চাওয়া।

সার্চ ইঞ্জিনের প্রতিটি অ্যালগরিদম অনুসরণ করে কোনো ওয়েবসাইট র‍্যাঙ্ক (Rank) করানো কিছুটা কষ্টসাধ্য এবং সময়ের ব্যাপার, তাই অনেকেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইটকে র‍্যাঙ্ক করানোর জন্য Black Hat SEO পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে।

গুগল (Google) যেহেতু কোনো ওয়েবসাইটের ব্যাকলিংকের (Backlink) সংখ্যা বেশি থাকলে সেটিকে ভালো চোখে দেখে, তাই এক্ষেত্রে Black Hat SEO যারা করে তারা কিছু 3rd party অ্যাপ ব্যবহার করে এবং Black Hat SEO-এর উদ্দেশ্যে বানানো বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে টাকার বিনিময়ে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকলিঙ্ক (Backlink) কালেক্ট করে থাকে।

গুগলের ১৫ আগস্ট, ২০২৪-এর সর্বশেষ আপডেটে বলা হয়েছে “তারা এইসব ওয়েবসাইট খুঁজে বের করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গুগল কোনোভাবে এই ধরনের ওয়েবসাইট চিহ্নিত করতে পারলে সরাসরি পেনাল্টি দিয়ে দেবে।”

গ্রে হ্যাট এসইও

এটি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের এমন একটি কৌশল যেখানে দ্রুত র‍্যাঙ্ক বা ট্রাফিক বৃদ্ধি করার জন্য এমন কিছু কৌশল ব্যবহার করে যেখানে সম্পূর্ণরুপে সার্চ ইঞ্জিনের নিয়মকানন অনুসরণও করে না আবার ভঙ্গও করে না।

গ্রে হ্যাট এসইও কৌশলঃ

  • কন্টেন্ট স্পিনিং বা একই কন্টেন্ট সামান্য পরিবর্তন করে বারবার ব্যবহার করা।
  • পেইড রিভিউস অর্থাৎ পণ্য বা সেবার জন্য টাকার মাধ্যমে পজেটিভ রিভিও কালেক্ট করা।
  • ডোমেইন অথরিটি বাড়ানোর জন্য অনেকবেশি ট্রাফিক আছে এমন পুরোনো ডোমেইন ক্রয় করা।
  • অতিরিক্ত অথোরিটি তৈরি করার জন্য পিবিএন (Private Blog Network) ব্যবহার।

মার্কেটিং স্ট্রাটিজি অনুযায়ী এসইও এর প্রকারভেদ

কনটেন্ট এসইও

কন্টেন্ট এসইও বলতে বুঝানো হয়েছে এমন কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে যা এসইও ফ্রেন্ডলি হতে হবে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য পর্যাপ্ত তথ্য থাকে।

ব্র্যান্ডিং এসইও

ব্র্যান্ডিং এসইও এমন একটি কৌশল যেখানে ব্র্যান্ডের নামকে সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্ক করতে কাজ করে। এর মাধ্যমে ব্র্যান্ডের ট্রাস্ট ভেল্যু এবং অর্গানিক ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।

ভিডিও এসইও

ভিডিও এসইও হলো ভিডিও কনটেন্টকে সার্চ ইঞ্জিনে র‍্যাঙ্ক করার প্রক্রিয়া। এতে টাইটেল, ডেসক্রিপশন, এবং কিওয়ার্ড অপ্টিমাইজেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া ইউটিউব এবং অন্যান্য ভিডিও প্ল্যাটফর্মে অর্গানিক ট্রাফিক এবং ভিউ বাড়ানোর জন্য এটি কাজ করে।

মোবাইল এসইও

মোবাইল এসইও হলো মোবাইল ব্যবহারকারীদের জন্য ওয়েবসাইটকে অপ্টিমাইজ করা।

এর মধ্যে রয়েছে মোবাইল-ফ্রেন্ডলি ডিজাইন, পেজ লোড টাইম কমানো ইত্যাদি।

ব্যবসা বা ইন্ডাস্ট্রি অনুযায়ী এসইও এর প্রকারভেদ

ই-কমার্স এসইও

ই-কমার্স এসইও হলো ই-কমার্স সাইটের পণ্য ও ক্যাটাগরি পেজগুলিকে সার্চ ইঞ্জিনে র‌্যাংক করার প্রক্রিয়া।

  • প্রোডাক্ট পেজ অপ্টিমাইজেশন
  • ফিল্টার (Filter) এবং ক্যাটাগরি (Category) পেজের এসইও
  • প্রোডাক্ট রিভিউ এবং রেটিং (Rating)

লোকাল এসইও

লোকাল এসইও হলো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার ব্যবহারকারীদের জন্য ব্যবসার ভিজিবিলিটি বাড়ানোর কৌশল। এটি গুগল মাই বিজনেস অপ্টিমাইজেশন, স্থানীয় কিওয়ার্ড ব্যবহার, এবং রিভিউ ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে স্থানীয় ট্রাফিক বৃদ্ধি করে।

ইন্টারন্যাশনাল এসইও

ইন্টারন্যাশনাল এসইও হলো এমন একটি কৌশল, যা বিভিন্ন দেশের ভাষা, সংস্কৃতি, এবং সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারের প্যাটার্ন অনুযায়ী ওয়েবসাইট অপ্টিমাইজ করে। এর মাধ্যমে অন্য দেশে থাকা ব্যবহারকারীদের জন্য কন্টেন্টকে আরও প্রাসঙ্গিক করা হয়।

বহুভাষিক এসইও

বহুভাষিক এসইও হলো বিভিন্ন ভাষায় কন্টেন্ট অপ্টিমাইজ করে অন্যান্য ভাষার ব্যবহারকারীদের জন্য সার্চ ইঞ্জিনে দৃশ্যমান করার প্রক্রিয়া। এতে স্থানীয় কিওয়ার্ড এবং hreflang ট্যাগ ব্যবহার করা হয়।

একই সঙ্গে যে দেশের জন্য কন্টেন্ট অপটিমাইজ করা হবে সে দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরী।

রিলেটেড আর্টিকেল

আউটসোর্সিং কী? একটি সহজ ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ গাইড

ফ্রিল্যান্সিং কী? কোথায় এবং কিভাবে শুরু করবেন?

ইমেজ SEO কী এবং কিভাবে করা হয়?

এসইও (SEO) শেখার জন্য কি কি জানা প্রয়োজন?

Learn SEO Beginner Guideline: ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন

By, Md Sazzad Hossain Remon.

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *